নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিং বা ইভিএম ব্যবহারের কোনো সম্ভাবনা নেই ।
কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, একদিকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইভিএম নেই আর অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কোনো আইন বা বিধিও নেই।
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম প্রকল্পটি চালু হয় ২০০৯ সাল থেকে বিগত নির্বাচন কমিশনের সময়ে। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হয় জাতীয় নির্বাছনে ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে।
তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন মনে করছে, আগামি জাতীয় সংসদে এই পদ্ধতির ব্যবহার সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাবেদ আলী বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইভিএম ব্যবহার হবে কি না এ নিয়ে কোন আইন বা বিধি প্রণীত হয়নি। এ সংক্রান্ত যে আইন তা স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি তা প্রণীত হয় তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার হতে পারে, না হলে হতে পারবে না।
ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে এই পদ্ধতিটি চালুর চিন্তাভাবনা হয়েছিল তার যৌক্তিকতা নিয়েই একটা প্রশ্ন উঠছে। তবে সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার বলছেন, পরিকল্পনা মতো এগুলে ইভিএমকে অনেকটাই কার্যকর করা সম্ভব হতো।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, তাদের সময়কালে যেভাবে পরিকল্পনাটি হাতে নেয়া হয়েছিল - সেভাবে এগুতে পারলে নির্বাচন কমিশন অনেকটাই কার্যকর করতে পারতো ইভিএমকে।
তিনি বলেন, “আমরা আইনের পরিবর্তনের জন্য যে খসড়াটি রেখে এসেছিলাম পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছিলাম, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সময়মত সেটাকে এগিয়ে নিতে পারেনি। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বুয়েট এবং সেনাবাহিনীর মেশিন ট্যুলস ফ্যাক্টরির সাথে চুক্তি ছিল - পর্যায়ক্রমে তারা এই মেশিন তৈরি করবে।”
তিনি বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম যেন আগামি জাতীয় নির্বাচনে শতভাগ না হলেও পঁচিশ-ত্রিশ ভাগ বা পঞ্চাশ ভাগ ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা যায়।"
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে বলেও জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনার জাবেদ আলী বলছেন, "ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ইভিএমের অভাব। বর্তমান যে ভোটার সংখ্যা তাতে কমপক্ষে চার লাখ ইভিএম সেট প্রয়োজন হবে - যার একভাগও এখন তৈরি নেই। সাড়ে বারোশোর মতো ইভিএম এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে যেটি প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না।"
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন তাদের সময় নির্বাচন কমিশন মোট এগারোশর মতো ইভিএম প্রস্তুত করেছিল । সেখানে বর্তশান কমিশন খুব একটা এগুতে পারেনি। তাহলে ব্যয়বহুল এই প্রকল্পটির ভবিষ্যত কি?
এ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা কিছুটা টেকনিক্যাল এবং নতুন যেহেতু তাই এটা ব্যয়বহুল ছিল বটে, তবে আমি বলবো না এটা সম্পূর্ণ হাতের নাগালের বাইরে ছিল।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ ইভিএম পদ্ধতি থেকে সরে আসতে চাইছে। তবে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো জনবহুল দেশে যেহেতু সফলভাবে ইভিএম ব্যবহৃত হচ্ছে তাই বাংলাদেশেও দ্রুত ও সঠিক ভাবে ভোটের ফল পাওয়া এবং সন্দেহমুক্ত নির্বাচনের জন্য ইভিএম একটি কার্যকর উপায় হতে পারতো। সূত্র: বিবিসি।
No comments:
Post a Comment